কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার ৩৩টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ক্যাম্প হলো উনছিপ্রাং। এই ক্যাম্পটি টেকনাফ-কক্সবাজার হাইওয়ে থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার ভেতরের দিকে রইক্ষ্যং এলাকায় অবস্থিত। যার তিন পাশে পাহাড় দিয়ে ঘেরা। বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত থেকে এই ক্যাম্পের পাশের টেকনাফ-কক্সবাজার হাইওয়ে খুব কাছে। হাইওয়ের খুব কাছে এবং মূল সড়ক থেকে এ ক্যাম্পটি দেড় কিলোমিটার ভেতরে। ফলে ক্যাম্পটি মাদক ও চোরাকারবারি ও রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের নিরাপদ ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছে। এমনকি মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা অস্ত্র ও মাদক নিয়ে সরাসরি সীমানা পার হয়ে এই ক্যাম্পে আশ্রয় নেয় বলে জানা গেছে একাধিক সূত্রে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে গেছে, এ ক্যাম্পের ভেতরে দেড়শ স্থানীয় বাঙালি পরিবার ও স্থানীয় কিছু আদিবাসী (ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী) বাঙালি বাস করে। যার কারণে অন্য ক্যাম্পের মতো কাঁটাতারের বেড়ার কার্যকারিতা নেই এখানে। ফলে আরসা, আল ইয়াকিন, হাকিম ডাকাত ও ইসলাম গ্রুপের সদস্যরা এই ক্যাম্পটিকে নিরাপদ আশ্রয় মনে করে। এখানে তারা যাতায়াত করে অবাধ। এসব গ্রুপের উৎপাতে সাধারণ রোহিঙ্গাসহ স্থানীয়দের এখানে বাস করা রীতিমতো কঠিন হয়ে পড়েছে।
স্থানীয়রা জানান, সীমান্ত একেবারে কাছে হওয়ায় মূলত এই ক্যাম্পেই মিয়ানমার থেকে আনা অস্ত্র ও মাদক মজুদ করা হয়। পরে এখান থেকে অন্যান্য ক্যাম্পে অস্ত্র ও মাদক সরবরাহ করে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা। তাছাড়া এ ক্যাম্পে সক্রিয় সন্ত্রাসীদের আস্তানা রয়েছে বলেও দাবি তাদের। রোহিঙ্গা মাঝির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আইনশৃঙ্খলা ও গোয়েন্দা বাহিনীর সঙ্গে একাধিক মিটিং করে ক্যাম্পের প্রবেশ পথ ও টহল রোড দিয়ে টহল জোরদার করার নির্দেশনা দিয়েছেন ক্যাম্প ইনচার্জ। এর পাশাপাশি, রোহিঙ্গারা যাতে অবৈধভাবে ক্যাম্পের বাইরে যেতে না পারে ও তাদের চিহ্নিত করার জন্য প্রবেশ গেটে পুলিশের পাশাপাশি এপিবিএনকে সহযোগিতা করার জন্য মাঝিদের (রোহিঙ্গা নেতা) দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে এটি খুব একটা কাজ করছে না। যেহেতু ক্যাম্পের ভেতরে স্থানীয় বাঙালি বসবাস করে, তাই তারা দিন-রাত যেকোনো সময় তাদের প্রয়োজনে বাইরে যাচ্ছে। এই সুযোগে অনেক রোহিঙ্গা বাইরে চলে যাচ্ছে। রোহিঙ্গারা বাইরে যাওয়া প্রতিরোধ করতে এপিবিএন পুলিশের সঙ্গে কাজ করছে না মাঝিরা। মাঝিরা ব্লকের মধ্যে দোকান করা, বিয়ে ও ঝগড়াবিবাদ মীমাংসায় সালিশ কাজে বেশি উৎসাহী। কারণ বিয়ে ও ঝগড়াবিবাদ মীমাংসার কাজে সাধারণ রোহিঙ্গা থেকে মাঝিরা টাকা পায়। এ ছাড়া গেটে দায়িত্ব পালন করে রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পের বাইরে যাওয়া থেকে আটকালে সাধারণ রোহিঙ্গার কাছে মাঝিরা বিরাগভাজন হয়।
স্থানীয় এক বাঙালি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ক্যাম্প ইনচার্জ মো. মোস্তাফিজুর রহমান গত আগস্টে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে জোরালো অভিযান চালালে দিনের বেলায় তারা দোকান-পাট বন্ধ রাখে। কিন্তু সিআইসি বিকালে চলে গেলে রোহিঙ্গারা আবার দোকান-পাট খোলে তা গভীর রাত পর্যন্ত খোলা রাখে এবং এই দোকানগুলোই তখন মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। তারা আরও জানান, এ ক্যাম্পের অনেক রোহিঙ্গাই নিয়মিত টেকনাফ বন্দরে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে যায়। রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পের বাইরে কাজের জন্য যাওয়া বন্ধে এক দিন ১৯ রোহিঙ্গাকে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে শাস্তি দেওয়া হয়। এর পর থেকে যদিও প্রকাশ্যে রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পের বাইরে কাজে যাওয়া কিছুটা কমেছে। কিন্তু বর্তমানে ক্যাম্পের বিভিন্ন স্থানের কাঁটাতার বেড়া কেটে পাহাড়ি পথ দিয়ে ক্যাম্পের বাইরে চলে যাচ্ছে রোহিঙ্গারা। এ বিষয়ে জানতে ক্যাম্প ইনচার্জ ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ক্যাম্পের বিষয়ে জানতে অফিসে যোগাযোগ করার অনুরোধ করেন
পাঠকের মতামত